QR Code
https://iclfi.org/pubs/wh/2024-bn-bangladesh
Translated from Bangladesh: Tasks and dangers (ইংরেজি), Workers Hammer No. 254

বাংলাদেশে ছাত্র নেতৃত্বাধীন বিপ্লবী অভ্যুত্থান ঘৃণিত হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং রাষ্ট্রযন্ত্রকে পঙ্গু করে দেয়, পুলিশকে খেদিয়ে বিদায় করে, এবং সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের আলোচনার টেবিলে এসে বসতে বাধ্য করে। এটি ছিল একটি অসাধারণ জিত যা কয়েক দশকের দুর্নীতিগ্রস্ত শাসন এবং অবনতিশীল অর্থনীতিতে জনসাধারণের ক্রমশ জমা হওয়া ক্ষোভকে বন্ধনমুক্ত করে দেয়।

কিন্তু আন্দোলনের ছাত্র নেতারা মাইক্রো-ফাইনান্সিয়ার (ক্ষুদ্র-অর্থদাতা) মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী পুঁজিবাদী সরকারের প্রতি আস্থা রেখেছেন (এবং কেউ কেউ যোগ দিয়েছেন)। এটা এগিয়ে যাওয়ার পথ নয়; এটি বাংলাদেশ যে সমস্যার সম্মুখীন, তার সমাধান করতে পারে না। এর উদ্দেশ্য হল একটি গণতান্ত্রিক মুখোশ সামনে তুলে ধরা, শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করা এবং আজকের পরিস্থিতির জন্য দায়ী মূলগত অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর কিছুই পরিবর্তন না করা।

বিপ্লবের কাজ

স্পষ্ট করেই বলা ভাল: জনগণের আকাঙ্ক্ষা হাসিনা ব্যবস্থার একটি মৌলিক পরিবর্তনের জন্য আর্তনাদ করে। এর অর্থ হল যেভাবে সমগ্র দেশ পরিচালিত হয় তার বিরুদ্ধে লড়াই করা: নারীরা পোশাকের দোকানে পরিশ্রম করে এবং তা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে, শুধুমাত্র সাম্রাজ্যবাদী এবং দেশীয় পুঁজিবাদীদের জন্য বিপুল লাভ সৃষ্টি করে দেওয়ার জন্য; ছাত্রদের জন্য পর্যাপ্ত মানের এবং ভাল বেতনের চাকরি নেই; আইএমএফের কাছে ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের জন্য জনসাধারণ হাড় বেরিয়ে যাওয়া পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছে। এইসবগুলোই হল সে-সমস্ত জ্বলন্ত প্রশ্ন যা কোটি কোটি মানুষকে রাস্তায় নামিয়ে এনেছে, এবং হাসিনার জঞ্জাল পরিষ্কার করার জন্য নীতি পরিবর্তন বা ইউনূসের মতো আরও "গণতান্ত্রিক" মুখ বসানোর মাধ্যমে এগুলোর কোনোটিরই সমাধান হবে না, যা বাস্তবে গরীব দেশে পুঁজিবাদ চালানোর নোংরা ফলশ্রুতি। এর প্রত্যেকটিরই সমাধান করতে গেলে প্রশ্ন ওঠে: কীভাবে দেশের উন্নয়ন করা যায়।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই

যে ভ্রষ্টাচার ও স্বজনপোষণের জন্য হাসিনাকে ঘৃণা করা হত, সেটা যে কেবল তারই শাসনের বৈশিষ্ট্য, তা মোটেই নয়; ওগুলো নিপীড়িত দেশের শাসনের একটি বৈশিষ্ট্যমূলক চিহ্ন। হতভাগ্য নব্য ঔপনিবেশিক বুর্জোয়ারা তাদের দেশের লুণ্ঠনের জন্য মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করে। বাংলাদেশের শাসকেরা পশ্চিমী বিশ্বের স্বার্থে নিজেদের দেশকে একটি কম পয়সায় উদয়াস্ত খাটিয়ে নেওয়ার কারখানা হিসেবে টিকিয়ে রাখার জন্য দেশের মানুষকে পিষে মারে। ওই কাজ মাত্রই দুর্নীতি থাকবে। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মায়ানমার দেখুন; অথবা দক্ষিণ আফ্রিকা, বা নাইজেরিয়া, বা তৃতীয় বিশ্বের অন্য কোনো সরকার দেখুন। এই সব সরকারই আগা-গোড়া দুর্নীতিগ্রস্ত। এই মডেলে যতদিন বাংলাদেশ চলবে ততদিন দুর্নীতির অবসান অসম্ভব।

কোটা না যোগ্যতা: একটি ছোট্ট কেক কে নিয়ে লড়াই

কোটার প্রশ্ন, যা ছাত্র জনসাধারণকে উজ্জীবিত করে তুলেছিল, একই সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে: অসম্পূর্ণ উন্নয়ন। চাকরি নিয়ে লড়াই কোটা ও মেধাকে কেন্দ্র করে চলে। গোটা দক্ষিণ এশিয়াতেই এই অবস্থা। কিন্তু এই বিতর্ক কেন্দ্রীয় সমস্যার সমাধান করে না। কোটা দেখা যায় কারণ সবার জন্য পর্যাপ্ত চাকরি নেই, এবং ভাল চাকরিগুলি প্রভাবশালী বা আরও শক্তিশালী গোষ্ঠীগুলির কাছে যায়: উচ্চ- এবং মধ্যবিত্ত লোকেদের কাছে ।

মুক্তিযুদ্ধের বংশধরদের জন্য কোটা অবশ্যই স্বজনপোষণ ছিল এবং তাতে কোটি কোটি মানুষের সংগ্রামকে অপমান করা হচ্ছিল। তবুও কি ৩০ শতাংশ কোটা না থাকলে চাকরির সংকট মিটবে? যে ছাত্ররা এত বীরত্বের সাথে হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য রাস্তায় নেমেছিল, তারা কি বলতে পারে যে একটি মেধা-ভিত্তিক ব্যবস্থা তাদের সবাইকে উপযুক্ত এবং ভাল বেতনের চাকরি দিয়ে দেবে? না।

সত্য হল, সাম্রাজ্যবাদ দ্বারা নিপীড়িত দেশগুলি ব্যাপক জনগণের চাহিদা পূরণের জন্য বিকাশ সাধন করতে পারে না। যতদিন পর্যাপ্ত চাকরি না থাকবে ততদিন কোটার প্রয়োজনীয়তা থাকবে; জনসাধারণের জন্য সমাধান হল, একটি ছোট্ট কেক নিয়ে লড়াই না করে—যা কখনই সমস্ত মুখগুলিকে খাওয়াতে পারে না—বরং কেকটির আকারটিকে বড় করা। কিন্তু এই কেক তখনই বাড়তে পারে যখন সমাজের উৎপাদক শক্তিগুলো—জমি, কলকারখানা, ব্যাঙ্ক—আর শাসকশ্রেণীর নিয়ন্ত্রণে থাকবে না, যাদের পুরো কাজই হচ্ছে দেশকে বিদেশী আর্থিক স্বার্থের কাছে বিক্রি করে দেওয়া।

সংখ্যালঘুদের রক্ষা বিপ্লবের চাবিকাঠি

একটি অতি-গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল হিন্দু সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা। এটি ছাত্র আন্দোলনের কৃতিত্ব যে যখন হিন্দুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার খবর ছড়িয়ে পড়ে, তখন আন্দোলনটি হিন্দুদের বাড়ি এবং আশেপাশের প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করেছিল। আ.লীগের কিছু ঘটনাচক্রে হিন্দু-ধর্মাবলম্বী নেতাদের বিরুদ্ধে হামলাগুলি ভারতীয়- এবং পশ্চিমী বিশ্ব-সমর্থিত মিডিয়ার পালে হাওয়া দিয়েছে, যারা আন্দোলনের বদনাম করতে এটি ব্যবহার করছে। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতার লড়াইয়ের সপক্ষে সীমান্তের ওপারে থাকা ভারতীয় হিন্দু জনগণের সমর্থন জিতে নেওয়ার সম্ভাবনাকে ক্ষুণ্ন করে।

দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্প্রদায়িক প্রতিক্রিয়া দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। তাই এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে সাম্প্রদায়িকতার বিপদকে "বাস্তব" প্রশ্নগুলি থেকে "সরিয়ে আনা হচ্ছে” মনে করে তাকে অগ্রাহ্য না করে বরং সেটার মুখোমুখি মোকাবেলা করা হোক, আর শ্রমিক-শ্রেণীর ক্ষমতা-দখলের লড়াইয়ের একটি মূল দিক হিসাবে হিন্দু সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার প্রশ্নটিকে সেই লড়াইয়ে সংহত করা হোক। একমাত্র হিন্দুদের প্রতিরক্ষায় সক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব নিলেই তবে মুসলিম জনগণ বাংলাদেশের হিন্দুদের আওয়ামী লীগের "ধর্মনিরপেক্ষতা" থেকে দূরে সরিয়ে এনে তাদের সমর্থন লাভ করতে পারে এবং হিন্দু-মুসলিম ঐক্য গড়ে তুলে তাদের হাসিনা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যোদ্ধায় পরিণত করতে পারে। এই ধরনের ঘটনাস্রোত সমগ্র উপমহাদেশ জুড়ে মারাত্মক সাম্প্রদায়িক মেরুকরণগুলোকে ভেদ করে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা রাখে।

ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের ব্যাপারে বাংলাদেশ স্বাভাবিক ভাবেই সাবধান। আজ, যেভাবে হাসিনাকে মোদি সরকার আশ্রয় দিয়ে রাখছে, তাতে সত্যিকারের আশঙ্কা রয়েছে যে এই দু'জন সংগ্রামের অগ্রগতিকে দুর্বল করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। হিন্দু-জাতীয়তাবাদী প্রচারযন্ত্র জুলাইয়ের ঘটনাকে ভারত-বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করতে ব্যস্ত। সত্যটা হল, এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে নির্যাতিতরা একজন লৌহমুষ্টিব্যবহারকারী নেতাকে উৎখাত করে ফেলে, মোদির জন্য দুঃসংবাদ। বাংলাদেশে বিপ্লবের বিজয় ভারতের জনগণকে জাগিয়ে তুলবে, যারা নিজেরাও স্বৈরাচারী মোদি শাসনের অধীনে ভুগছে।

অর্থনৈতিক ভীতিপ্রদর্শন অগ্রাহ্য করুন

উদারপন্থী এবং বুর্জোয়ারা অর্থনীতির দ্রুত পতনের ব্যাপারে কলরব সৃষ্টি করে এটিকে জনগণের বিরুদ্ধে একটা ডাণ্ডার মতো ব্যবহার করছে। হ্যাঁ, অর্থনীতি মারাত্মক সংকটে রয়েছে। কিন্তু জনসাধারণকে বুঝতে হবে যে অর্থনীতির অবস্থার জন্য বুর্জোয়ারাই দায়ী। কর্তারা লাভের ছিপিগুলো খুলে ফেলার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিত্যনৈমিত্তিক ব্যবসায় ফিরে যেতে চান। অনেক হয়েছে! কারখানা ও স্থিতাবস্থায় ফিরে যাওয়ার পরিবর্তে, শ্রমিকদের এই অর্থনৈতিক ব্ল্যাকমেইলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। লেনিন যেমন রাশিয়ায় ফেব্রুয়ারী বিপ্লবের পর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বুঝিয়েছিলেন: "পরাজয় যত আসন্ন হবে, বুর্জোয়াদের অপসারণ তত বেশি অপরিহার্য হবে।" একমাত্র শ্রমিক শ্রেণীই ক্ষমতা দখল করলে পারে অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলায় শৃঙ্খলা আনতে।

শ্রমিকদেরই শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম কাজই হচ্ছে শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। এর অর্থ হল পথে-ঘাটে "শান্তি" বজায় রাখার জন্য পুলিশ এবং রাজ্যের অন্যান্য বাহিনীকে পুনরুদ্ধার করা—অর্থাৎ, ভবিষ্যতের প্রতিবাদগুলিকে দমন করা, যেগুলি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আতঙ্ক সৃষ্টি করে। জুলাইয়ের ঘটনাগুলি দেখিয়েছে এই শক্তিগুলি আসলে কার পক্ষে। এই গুন্ডাদের আবার রাস্তায় নামানো শহীদদের স্মৃতির প্রতি একটা চরম অন্যায় হবে। জনগণ অসাধারণ বিপ্লবী উদ্যোগ দেখিয়েছে, সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রেখে এবং নিজস্ব উপায়ে বন্যার ত্রাণ সরবরাহ করে। তারা এখন অনুভব করেছে এবং দেখেছে যে দেশ চালানোর আরেকটি উপায় সম্ভব। তাদের অবশ্যই তাদের উদ্যোগের উপর ভিত্তি করে আন্দোলনটিকে গড়ে তুলতে হবে, শুধুমাত্র তাদের নিজস্ব শক্তির উপর নির্ভর করে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর জায়গায় শ্রমিক শ্রেণীর মিলিশিয়া (সেনাদল ) বসাও!

অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন নয়!

বাংলাদেশ আজ ঠিক সেই প্রশ্নের মুখোমুখি যেটি প্রত্যেক বিপ্লবেরই সম্মুখীন হতে হয়: কোন শ্রেণী সমাজ পরিচালনা করবে? দরিদ্র কৃষক ও বিপ্লবী ছাত্রদের দ্বারা সমর্থিত শ্রমিকরা, নাকি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যার পরেই আসবে প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া দলগুলোর সমন্বয়, যারা ১৫ বছরের আওয়ামী শাসনের পরে অবশেষে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করার সুযোগ দেখতে পাচ্ছে? সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্খা পূরণের জন্য বিপ্লবকে শ্রমিক শ্রেণীর হাতে দেশের ভার তুলে দিতে হবে, নতুবা পরিস্থিতি প্রতিক্রিয়ার দিকে মোড় নেবে। এগিয়ে যেতে হলে, বাংলাদেশের বিপ্লবীদের অবশ্যই রুশ বিপ্লবের শিক্ষা প্রয়োগ করতে হবে, যা সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অপরিহার্য।

প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হল অন্তর্বর্তী সরকার এবং এর সাথে সমঝোতাকারী সমস্ত শক্তিগুলির থেকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিচ্ছেদ সম্পন্ন করা। ইউনূস সরকার শাসক শ্রেণীর একটি প্রতিনিধিত্বকারী হাতিয়ার, এবং এটিকে সমর্থন করা মানেই শুধুমাত্র বিপ্লবের শ্বাসরোধ করা। বিপ্লবী অভ্যুত্থানের সময়কালে, যেমনটি আজকের বাংলাদেশে, শাসক শ্রেণীগুলি সর্বস্ব হারাতে বসেছে। সুতরাং, সুযোগ দেওয়া হলে, তারা নতুন উদ্যোগ খুঁজে পাবে এবং যে জনসাধারণ তাদের শাসনকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস করেছিল, তাদের ওপর হিংস্র দমন-পীড়ন নামিয়ে আনবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হল ঠিক সেই ধরনের প্রয়োজনীয় সুযোগ যেটা পেলে শাসক শ্রেণী স্থিতিশীল হয়ে নিতে পারবে, তার ঘর গুছিয়ে নিতে পারবে, এবং প্রতিবিপ্লবের শক্তিগুলিকে তার অবস্থান সুরক্ষিত করার জন্য ডেকে আনতে পারবে। এই সরকার এবং তার সংলগ্ন এই আন্দোলনের সমস্ত সমঝোতাকারী শাখাগুলোর থেকেসম্পূর্ণভাবে আলাদা না হয়ে গেলে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা অবশ্যম্ভাবী হবে।

ইউনূসের বাম দালাল

অথচ বেশিরভাগ বামপন্থীরাই উল্টো কাজটা করছে। বাম গণতান্ত্রিক জোট (এলডিএ), যেটি অর্ধ ডজন সমাজতান্ত্রিক এবং কমিউনিস্ট পার্টির একটি নির্বাচনী জোট, নিজেকে বুর্জোয়া দলগুলির বিকল্প হিসাবে উপস্থাপন করে। এই জোটটি যে একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক, সেই সত্যটিকে একপাশে রেখেও, এটি ইউনূস সরকারের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা সঁপে রাখে, "জন-অভ্যুত্থানের প্রকৃত মর্মে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার" আহ্বান জানিয়ে (ঢাকা ট্রিবিউন, ১১ আগস্ট)। যেমনটি আমরা ব্যাখ্যা করেছি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি যে কোনো আস্থাই বিপ্লবের কেবল শ্বাসরোধই করতে পারে। এইসব দম-ফুরিয়ে-যাওয়া বামপন্থীরা বিপ্লবী অনুভূতিকে বিগত পুঁজিবাদী স্থিতিশীলতার পথের দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে কমিউনিস্টদের পতাকাকে নোংরা করে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যে বিশ্বাস রাখায় কমিউনিস্ট বলে কিছু নেই।

বাম ঐক্যের বিপদ

এমন লোক আছে যারা অন্তর্বর্তী সরকারের বিরোধিতা করে। একটি উদাহরণ হল বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন (RS-YM), একটি মাওবাদী সংগঠন। তারা বোঝায় যে ইউনূস সরকার সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা সমর্থিত এবং যে “[এই] বিপ্লব শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্ব ছাড়া সফল হতে পারে না, এবং এটি ছাড়া, জনগণের - বিশেষ করে শ্রমিক এবং কৃষকদের - মুক্তি অসম্ভব" (ইয়েনিডেমোক্র্যাসি৩৪. নেট, ২২ আগস্ট)। এটা সঠিক।

কিন্তু তারপর, তারা ফ্যাসিবাদ-বিরোধী এবং আওয়ামী-বিরোধী শক্তি এবং সকল শ্রেণী, পেশা ও সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের একটি "অস্থায়ী জনগণের সরকার" প্রস্তাব করে তাদের বিরোধিতার ভিতটাকেই ক্ষইয়ে দেয়। অন্য কথায়, তারা এমন একটি সরকার চায় যাতে বুর্জোয়াদের "প্রগতিশীল" শাখা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। কিন্তু আমরা যেমন ব্যাখ্যা করেছি, আজকের বাংলাদেশে সমগ্র সংকট সামগ্রিকভাবে এই শ্রেণীর শাসনের ফল। এটি বিভিন্ন পুঁজিবাদী ব্যক্তিদের মস্তিষ্কপ্রসূত আবেগপূর্ণ ধারণা সম্পর্কে নয়, সমাজে তাদের সামাজিক ভূমিকা সম্পর্কে। বাংলাদেশের বুর্জোয়ারা বস্তুগতভাবে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক কাঠামোর মূলে এবং সাম্রাজ্যবাদের কাছে সেটির অধীনতায় শিকড় গেড়ে রয়েছে, এবং তারা এই পরিস্থিতির থেকে উপকৃত হয়; এটি সেইসব মৌলিক সমস্যাগুলি সমাধান করতে পারে না যেগুলি জনগণকে রাস্তায় নামিয়ে এনেছে।

শুধু ইউনূস সরকারের বিরোধিতা করাই যথেষ্ট নয়, বরং দরকার বুর্জোয়া ব্যবস্থার প্রতি সকল সমঝোতার বিরোধিতা করা। এগিয়ে যেতে হলে বিপ্লবকে অবশ্যই এই শ্রেণীর সাথে একটি চূড়ান্ত বিচ্ছেদ ঘটাতে হবে। RS-YM, ইউনূস সরকারের বিরোধিতার সঠিক অবস্থান থেকে অগ্রসর হয়ে, বুর্জোয়াদের উজ্জ্বল রঙে রাঙিয়ে, তার প্রগতিশীল শাখার সন্ধান করতে করতে শেষ পর্যন্ত সেই সরকারেরই সাথে সমঝোতায় এসে দাঁড়ায়। রুশ বিপ্লবে এটি মিলিউকভের বিরোধিতা করতে গিয়ে কেরেনস্কির পক্ষে এসে দাঁড়ানোর মতো।

এই প্রসঙ্গে একটি উল্লেখযোগ্য সংগঠন হলো বিপ্লবী কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল (আরসিআই)। তারা বাংলাদেশের ঘটনা নিয়ে পশ্চিম বিশ্বে বেশ লক্ষণীয় মাত্রায় সক্রিয়। তারা অনেক কিছু লেখে যা সঠিক: ইউনূস সরকারের বিরোধিতা, শ্রমিক শ্রেণীর গুরুত্ব, বুর্জোয়া রাষ্ট্রের উপর কোন আস্থা না রাখা যা "জনগণের বিজয় কেড়ে নেবে"; যে জনসাধারণকে "কেবল তাদের নিজস্ব ক্ষমতার উপর আস্থা রাখতে হবে" এবং "ছাত্র এবং শ্রমজীবী জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না হওয়া পর্যন্ত" সংগ্রাম জারি রাখতে হবে, এবং পুরো হাসিনা ব্যবস্থাকে বিদায় দিতে হবে। আমরা এই সব কিছুর সঙ্গে একমত।

তবুও RCI-এর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদের সমালোচনা করা প্রয়োজন কারণ বাম দিকে তারা বিপ্লবের কাজগুলির সবচেয়ে কাছাকাছি আসে, শুধু মূল সমস্যার সামনে এসে পড়ে ডুব মারে, যখন এটি তাদের দিকে ফিরে পাল্টা চোখে চোখ রেখে নির্ভীক দৃষ্টিতে তাকায়। গোটা প্রশ্নটি বাংলাদেশ সম্পর্কে বিপ্লবীদের তাৎক্ষণিক এবং বাস্তব কাজগুলির উপর এসে দাঁড়ায়: শ্রেণী স্বাধীনতার পথ ধরে আন্দোলনের মধ্যে একটি রাজনৈতিক বিভাজনের জন্য লড়াই করা। বাস্তবে, এই মুহুর্তে, এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি মনোভাবের রূপে আমাদের সামনে খাড়া হচ্ছে, যা বিপ্লবের অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা হিসাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এবং এই প্রশ্নে যুদ্ধক্ষেত্রে বিন্যস্ত শক্তিগুলি বিভক্ত, সংখ্যাগরিষ্ঠরা এটিকে কোনো না কোনোভাবে সমর্থন করে।

সবচেয়ে জরুরী কাজ হলো, যারা মনোগতভাবে বাংলাদেশে মৌলিক পরিবর্তনের জন্য লড়াই করতে চান তাদের বোঝানো যে ইউনূসের ওপর আস্থা রেখে এ ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে না। সংক্ষেপে, আজকের বিপ্লবীদের কাজ হল লেনিনের মতো একই লড়াই চালানো যেটি সমগ্র শ্রমিক আন্দোলনে অস্থায়ী সরকার এবং এর সমঝোতাকারীদের সাথে সম্পূর্ণ ছাড়াছাড়ির মাধ্যমে বলশেভিক পার্টিকে পুনরায় সজ্জিত করার জন্য ১৯১৭ সালের এপ্রিলে তিনি চালিয়েছিলেন।

এবং ঠিক এই জায়গাটাতেই RCI ব্যর্থ হয়। বাংলাদেশের জন্য তাদের কর্মসূচি, আনুষ্ঠানিকভাবে সঠিক হলেও, সেটা শ্রেণী-ভিত্তিতে তৈরী ফাটল ধরে বামদের বিভক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয় না। যদিও তারা মন্তব্য করে যে ছাত্ররা ইউনূস সরকারকে সমর্থন করে ভুল করেছিল, এই প্রশ্নে তাদের বিতর্ক বাকি বামপন্থীদের দিকে পরিচালিত হয় না। তার কারণ হল বিপ্লবী দল গঠনের জন্য তাদের কাছে একমাত্র প্রস্তাব হল RCI-এ যোগদান করা; তার মানে বিপ্লবী কর্মসূচীর ভিত্তিতে বামদের ভেঙে পুনর্গঠন না করা - যেটি হল সত্যিকারের শ্রমিক-শ্রেণীর পার্টি গড়ে তোলার ও বিপ্লব সম্পূর্ণ করার একমাত্র উপায়।

বুর্জোয়াদের সাথে সমস্ত সমঝোতা নাকচ করার লাইন ধরে আন্দোলনে একটি রাজনৈতিক ভাঙ্গন ঘটানোর প্রশ্ন হল সেই নির্ধারক প্রশ্ন যার উপর ভর করে বিপ্লব হয় এগিয়ে যাবে নয় মুখ থুবড়ে পড়বে। ইউনূস সরকারের সাথে তুষ্টির ভিত্তিতে বামপন্থীদের ঐক্য আজ বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে বড় বিপদ।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় মুক্তিলাভের দিকে এগিয়ে চলো!

বাঙালি জনতা তাদের জাতির দ্বিতীয় মুক্তির দ্বার খুলে দিয়েছে, কিন্তু সাফল্য কোনোভাবেই নিশ্চিত নয়। আন্দোলনের সামনে রয়েছে সব ধরনের বিপদ, যার সবকটিই বুর্জোয়াদের কাছে শ্রমজীবী জনগণের অধীনতাতে গিয়ে দাঁড়ায়। আমরা বাংলাদেশের বিপ্লবীদের এবং প্রবাসীদের বলি: লেনিনের দিকে তাকান! রাশিয়ার সমস্ত উত্থান-পতনের মধ্যে, তিনি একজনের সংখ্যালঘু হতে এবং এই প্রশ্নে বলশেভিকদের সাথে বিভক্ত হতে ভয় পাননি। আজ যা গুরুত্বপূর্ণ তা হল এই ধরনের একটি লেনিনবাদী মেরু উপস্থিত থাকুক এবং এই লড়াইয়ে যোগ দিতে ইচ্ছুক হোক। এটিই হল আজ বাংলাদেশের জন্য অক্টোবর বিপ্লবের কেন্দ্রীয় শিক্ষা।

এবারের সংগ্রাম পূর্ণ স্বাধীনতার সংগ্রাম!